দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ আয়নার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। যখনই একদিকে পাঠানো আলোকে অন্যদিকে নিতে হয় তখন আমরা সাধারণ আয়না ব্যবহার করি। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ সাধারণ আয়নায় ডান এবং বাম দিক বদলে যায়। তাই যদি আমাদের ডান-বাম অবিকৃত রাখতে হয় তাহলে একটি আয়নার প্রতিবিম্ব অন্য একটি আয়নার দ্বিতীয়বার প্রতিফলিত করে আবার ঠিক করে নিতে হয়।
সাধারণ আয়নার প্রতিবিম্ব ডান এবং বামের পরিবর্তন হয়। দুটি আয়নাকে পরস্পরের সাথে 90° তে রেখে সেটাকেই একটা আয়না হিসেবে ব্যবহার করলে ডান-বামের পরিবর্তন হয় না। দুটি আয়না দিয়ে বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখো(8.26) ।
এখানে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা ভালো, যখন খুব ভালো প্রতিফলনের প্রয়োজন হয় তখন কিন্তু সাধারণ আয়না ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধরনের প্রতিফলন করা হয়। আমরা পরের অধ্যায়ে দেখব পুরোপুরি স্বচ্ছ মাধ্যম দিয়ে কীভাবে আলোকে প্রতিফলিত করা যায়। আমরা পরের অধ্যায়ে দেখব পুরোপুরি স্বচ্ছ মাধ্যম দিয়ে কিভাবে আলোক প্রতিফলিত করা যায় ।
উত্তল আয়নায় যেহেতু সোজা এবং ছোট প্রতিবিম্ব তৈরি করা যায় ভাই বড় কোনো দৃশ্যকে ছোট জায়গায় দেখতে হলে উত্তল আরনা ব্যবহার করা হয়। গাড়ির দক্ষ ড্রাইভাররা গাড়ি চালানোর সময় সব সময় পেছনে কী হচ্ছে দেখার চেষ্টা করেন, সে জন্য গাড়ির ড্রাইভারের সামনে রিয়ার ভিউ মিরর থাকে। এই মিররগুলোতে উত্তল আয়না ব্যবহার করা হয় যেন ছোট একটা আয়না দিয়েই গাড়ির ড্রাইভাররা পেছনের বড় একটা জায়গা দেখতে পারেন।
অবতল আয়নার সবচেয়ে বড় ব্যবহার হচ্ছে টেলিস্কোপে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে সুক্ষ্ম টেলিস্কোপে অবতল আয়না ব্যবহার করা হয় । অনেকে সাধারণভাবে মনে করে দুরের কোনো ছোট জিনিসকে অনেক বড় করে দেখানোই বুঝি ভালো টেলিস্কোপের দায়িত্ব। আসলে সেটি সত্যি নয়, ভালো টেলিস্কোপের দায়িত্ব অনেক কম আলোতেও স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করা। সেজন্য অবতল আয়নার আকার যত বড় হবে, সেটি তত বেশি আলো সংগ্রহ করে তত স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারবে। পৃথিবীর সব বড় বড় টেলিস্কোপে অবতল আরনা ব্যবহার করা হয়।
অবতল আয়নার আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে আলোকের সমান্তরাল বিম তৈরি করা। জাহাজ বা লঞ্চের সার্চলাইটে অবতল আয়না ব্যবহার করা হয়। আলোর উৎসটুকু থাকে ফোকাস বিন্দুতে তাই সেটি অবতল আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে সমান্তরাল বিষ হিসেবে বের হয়ে যায়। তোমরা দৈনন্দিন জীবনে যে টর্চলাইট ব্যবহার করো সেখানেও বাহুটি রাখা হয় একটি অবতল আয়নার ফোকাস বিন্দুতে।
অবতল আয়নায় ফোকাস দূরত্বের ভেতরে কিছু থাকলে যেহেতু সোজা এবং বড় প্রতিবিম্ব তৈরি হয় ভাই কোনো কিছু বড় করে দেখতে হলেও অবতল আয়না ব্যবহার করা হয়। ডাক্তার কিংবা ডেন্টিস্টরা তাই অনেক সময়ই কিছু দেখার জন্য অবতল আয়না ব্যবহার করেন।
একটি দেশ যখন উন্নত হতে শুরু করে তখন প্রথমেই তার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হয়। রাস্তাঘাট তৈরি করতে হয় এবং সেই রাস্তাঘাট দিয়ে নানা ধরনের যানবাহন চলতে শুরু করে। তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছ আমাদের দেশের রাস্তাঘাট দিয়ে কত ধরনের যানবাহন যায় এবং প্রতিদিনই তার সংখ্যা কীভাবে বেড়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট যথেষ্ট না হওয়ায় ট্রাফিক জ্যামে আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয় এবং দূরপাল্লার যানবাহনে গাড়ি দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর একটি বড় কারণ আমাদের ড্রাইভাররা অনেক সময়ই নিরাপদ ড্রাইভিং না করে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে চায়। নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য অনেক ধরনের সচেতনতা দরকার, তার মাঝে আলোর সঠিক ব্যাপার একটি।
গাড়ি চালানোর সময় ব্রেক লাইট একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এই লাইট দেখে পেছনের গাড়ির ড্রাইভার বুঝতে পারে সামনের ড্রাইভার তার গতি কমাতে যাচ্ছে, গাড়ি কোনদিকে যাবে কিংবা লেন পরিবর্তন করবে কি না। সেটা অন্যদের জানানোর জন্য টার্ন লাইট ব্যবহার করা হয়। গাড়ির সামনের হেড লাইট অন্ধকার রাস্তা আলোকিত করে, কিন্তু সেটি ব্যবহারের একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে, বিপরীত থেকে একটা গাড়ি আসতে থাকলে তীব্র আলোতে যেন তার চোখ ধাঁধিয়ে না যায় সেজন্য কখনোই হাই বিম অন করতে হয় না। একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি চালায় তখন শুধু সামনে নয়, পেছনে এবং পাশে কোন যানবাহন আছে সেটি জানতে হয়। সেজন্য ড্রাইভারের সামনে রিয়ার ভিউ মিরর এবং দুই পাশে সাইডভিউ মিরর থাকে। ছোট আয়নাতে যেন অনেকটুকু জায়গা দেখা যায় সেজন্য এই আয়নাগুলো হয় অবতল। একজন ভালো ড্রাইভার যখন গাড়ি চালায় সে শুধু সামনের যানবাহন নয় পাশে এবং পেছনের যানবাহন নিয়েও সব সময় সজাগ থাকে।
পাহাড়ি রাস্তা সাধারণত আঁকাবাঁকা হয় আবার একই সাথে উঁচু-নিচু হয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময়ই রাস্তার এক পাশে উঁচু পাহাড় অন্য পাশে গভীর খাদ থাকে। কাজেই পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়। তারপরও স্থানে স্থানে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে যখন প্রায় সমকোণে বাঁক নিতে হয় তখন রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে কী আসছে সেটা জানার কোনো উপায় থাকে না। এরকম অবস্থায় বাঁকগুলোতে 45° কোণে বড় আকারের সমতল আয়না বসানো হয়। তখন রাস্তার দুই পাশের সব যানবাহনই রাস্তার অন্য পাশে কী আছে সেটি দেখতে পায় এবং রাস্তায় গাড়ি চালানো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হয়ে যায়।
Read more